অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইমের কারণে কম্পিউটার চোখের চাপ নামক একটি অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। এটি কখনও কখনও কম্পিউটার ভিশন সিন্ড্রোম বা ডিজিটাল চোখের চাপ নামেও পরিচিত। এই সমস্যা দেখা দেয় কারণ স্ক্রিন দেখার সময় আমাদের চোখকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়।
অনেকেই দীর্ঘ সময় ধরে ফোন, ট্যাবলেট, কম্পিউটার মনিটর এবং টেলিভিশনের দিকে তাকিয়ে থাকেন। আধুনিক চাকরি প্রায়ই দিনে কয়েক ঘণ্টা স্ক্রিনের দিকে মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন তৈরি করে।
এর পাশাপাশি, অনেকেই কাজের পরে বিশ্রামের জন্য ডিজিটাল মিডিয়া বা টিভির উপর নির্ভর করেন। ফলে, চোখের জন্য আরাম করার সুযোগ খুবই কম থাকে।
নিচে কম্পিউটার চোখের চাপে আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ ও লক্ষণ, পাশাপাশি এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু অনুশীলন এবং চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হলো।
ডিজিটাল স্ক্রিন দীর্ঘ সময় ধরে দেখার ফলে চোখকে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি পরিশ্রম করতে হয়। এটি চোখের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা দৃষ্টিশক্তি সম্পর্কিত সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
আমেরিকান অপ্টোমেট্রিক অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, স্ক্রিন দেখার সময় চোখের উপর চাপ বেশি পড়ে, যা কাগজে মুদ্রিত শব্দ পড়ার সময় হয় না।
এর কারণ হলো:
- স্ক্রিনের অক্ষরগুলো মুদ্রিত অক্ষরের মতো তীক্ষ্ণ হয় না।
- স্ক্রিনে কন্ট্রাস্ট কম থাকে এবং প্রতিফলন ও গ্লেয়ারের কারণে পড়ার সময় অতিরিক্ত চাপ পড়ে।
এ ছাড়া, অনেকে স্ক্রিন ভুল দূরত্ব ও কোণ থেকে দেখেন, যা অস্বস্তিকর অবস্থান তৈরি করতে পারে, বিশেষত যদি তাদের চোখের কোনো সমস্যা থাকে।
আরও একটি বড় কারণ হলো, স্ক্রিন দেখার সময় মানুষের পলক ফেলার হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। অথচ, পলক ফেলা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া যা চোখকে পরিষ্কার ও আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে।
লক্ষণ:
কম্পিউটার চোখের চাপের সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:
- ক্লান্ত ও চাপযুক্ত চোখ
- চোখে অস্বস্তি
- শুষ্ক, জ্বালাপোড়া বা চুলকানিময় চোখ
- স্ক্রিন বা দূরে তাকালে ঝাপসা দেখা
- চোখের ফোকাস পুনরুদ্ধারে সমস্যা
- উজ্জ্বল আলোতে সংবেদনশীলতা
- মাথাব্যথা
- ঘাড় ও কাঁধে ব্যথা
অনুশীলন।
নিম্নলিখিত অনুশীলনগুলো কম্পিউটার চোখের চাপ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।
২০-২০-২০ নিয়ম।
প্রতি ২০ মিনিট স্ক্রিন দেখার পর, ২০ সেকেন্ডের জন্য ২০ ফুট দূরের কোনো কিছুর দিকে তাকান। এটি চোখকে বিশ্রাম দিতে সাহায্য করে।
দূরত্ব ও নিকট বস্তুতে ফোকাস পরিবর্তন।
কিছু সময় ব্যয় করুন নিকটবর্তী এবং দূরবর্তী বস্তুতে ধীরে ধীরে ফোকাস পরিবর্তন করার জন্য।
ফিগার এইট।
৮ ফুট দূরের মেঝেতে একটি অদৃশ্য "৮" এর আকৃতি কল্পনা করুন। তারপর চোখ দিয়ে ধীরে ধীরে সেই আকৃতি ট্রেস করুন, ৩০ সেকেন্ডের জন্য একদিকে এবং ৩০ সেকেন্ডের জন্য অন্যদিকে।
পলক ফেলার অনুশীলন।
স্ক্রিন দেখার সময় স্বাভাবিক পলক ফেলার অভ্যাস ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করুন। এটি চোখের শুষ্কতা কমাতে সাহায্য করে।
অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি।
পরিবেশগত পরিবর্তন।
- আলো নিয়ন্ত্রণ করে গ্লেয়ার কমানো।
- স্ক্রিন থেকে চোখের দূরত্ব ৩৫-৪০ ইঞ্চি এবং স্ক্রিন চোখের লেভেলের ৫-৬ ইঞ্চি নিচে থাকা উচিত।
চিকিৎসকের পরামর্শ।
যদি চোখের চাপের লক্ষণগুলো বেশি অস্বস্তিকর হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ভিশন থেরাপিস্টের সাহায্য নিলে ফোকাস অনুশীলন ও পলক ফেলার প্রশিক্ষণ পাওয়া যেতে পারে।
চশমা।
চোখের অজানা কোনো সমস্যা থাকলে, সঠিক চশমা বা লেন্সের প্রয়োজন হতে পারে। এজন্য একজন চোখের বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করা জরুরি।
সংক্ষেপে।
কম্পিউটার চোখের চাপ একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা যা স্ক্রিন টাইম বাড়ার সঙ্গে বাড়তে পারে। স্ক্রিন টাইম কমানোই এই সমস্যার একমাত্র নির্ভরযোগ্য সমাধান।
যদি সমস্যাটি স্থায়ী হয়, তবে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, চোখের ব্যায়াম ও পরিবেশগত পরিবর্তন এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর হতে পারে।
COMMENTS